সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই উন্নয়ন সাধন করেছে, তবে যেসকল ক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তার মধ্যে দেশের উচ্চশিক্ষা খাত একটি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং বৈশ্বিক পরিসরে প্রতিযোগিতা করার মতো দক্ষ শ্রমশক্তির বিকাশে বাংলাদেশ সরকার শিক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। কৌশলগত পদক্ষেপ এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার দেশের উচ্চশিক্ষার পরিবেশের বিকাশ সাধনে সচেষ্ট হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে দেশের জনগণের ক্ষমতায়ন এবং বাংলাদেশকে একটি জ্ঞান দ্বারা পরিচালিত অর্থনীতিতে রূপ দিতে পদক্ষেপ নিয়েছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ছয়টি।
বর্তমানে দেশে ৫২টি পাবলিক ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩১ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। এক সময় বছরে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ভারতে উচ্চশিক্ষা নিতে যেত, এখন যায় না বললেই চলে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।
অন্তর্ভুক্তি ও সমতা নিশ্চিতকরণ
ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাত অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সীমিত প্রবেশাধিকার এবং মানের অভাব দ্বারা জর্জরিত ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকার শিক্ষাকে উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এই খাতের উন্নতি সাধনে ব্যপৃত হয়েছে। সরকার যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়েছে তার মধ্যে প্রথমেই আছে প্রবেশাধিকার বিস্তৃত করা যাতে করে অবহেলিত জনগোষ্ঠীও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে।
অসংখ্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা আমাদের উচ্চশিক্ষার পরিধিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন মানের দিক দিয়ে উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রকে বহুমাত্রিক করে তুলেছে।
বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ধরণের বৃত্তি এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা লাভের পথ সুগম করেছে। আর্থ-সামাজিক অবস্থান যাই হোক না কেন কেউ যদি উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে চায় তবে তার সামনে এখন অনেক রাস্তাই খোলা আছে। এসব পদক্ষেপের ফলে উচ্চশিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি এবং সমতা নিশ্চিত করা গেছে।
গবেষণায় প্রযুক্তির ব্যবহার
বাংলাদেশ সরকার গবেষণা এবং উদ্ভাবনের প্রতিও গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গবেষণার গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার গবেষণার অবকাঠামো গড়ে তুলতে শুরু করেছে, অ্যাকাডেমিক জগত এবং কর্মস্থলের মাঝে সমন্বয় সাধন করছে এবং গ্র্যান্ট ও ফেলোশিপের মাধ্যমে গবেষণার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ সরকার উচ্চশিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। ইন্টারনেট সংযোগ এবং আধুনিক বিভিন্ন উপাদানের সহজলভ্যতার ফলে বাংলাদেশে ই-লার্নিং প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে, এবং এর ফলে শিক্ষার্থীরা দূর থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, অনলাইন লাইব্রেরি এবং আকর্ষনীয় শিখন প্ল্যাটফর্ম সহজলভ্য হয়ে উঠেছে, যা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার পরিচায়ক।
দেশীয় উন্নয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাংলাদেশ সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করছে। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে জ্ঞান বিনিময়, গবেষণায় অংশগ্রহণ এবং শিক্ষকদের উন্নয়নের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধি করছে।
এতকিছুর পরেও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। মান নিশ্চিতকরণ, দক্ষতার ক্ষেত্রে অমিল এবং অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখনও অনেকটা পিছিয়ে আছে। এ সমস্যা সমাধানে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিবর্গকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি, উচ্চশিক্ষায় আমাদের অর্জনকে ধরে রাখতে হলে টেকসই অর্থায়ন প্রক্রিয়া এবং যথাযথ শাসন কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।
উচ্চশিক্ষায় পরিবর্তনের ছোঁয়া
বাংলাদেশ সরকার উচ্চশিক্ষা খাতের সমস্যা দূরীকরণে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মান নিশ্চিতকরণে সরকার প্রাতিষ্ঠানিক অডিটের ব্যবস্থা করেছে এবং এর মধ্য দিয়ে অ্যাকাডেমিক স্ট্যান্ডার্ড এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করছে। পাশাপাশি, কারিকুলামে পরিবর্তন, ইন্টার্নশিপ এবং ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকার অ্যাকাডেমিক জগত এবং কর্মজগতের মধ্যকার পার্থক্য দূর করার চেষ্টা করছে। এর ফলে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা যাতে কাজ করতে যেসকল দক্ষতার প্রয়োজন সেগুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে সরকার সচেষ্ট হয়েছে।
উদ্ভাবন এবং চিন্তা করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা এবং গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার এমনেকটি পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে যেখানে গবেষকরা বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া নিয়ে ভাবতে পারবে, প্রথাগত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে এবং শাস্তি কিংবা নিয়ন্ত্রণের ভয় ছাড়া জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে পারবে।
উচ্চশিক্ষার অবকাঠামোকে যুগোপযোগী করার জন্য এবং উচ্চশিক্ষা নিতে ইচ্ছুক ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থীর চাপ কুলানোর জন্য নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে। আধুনিক ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরি এবং গবেষণাগার নির্মাণ করা হয়েছে, এগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিভিন্ন বিষয়ের মাঝে সামঞ্জস্য করে ইন্টারডিসিপ্লিনারি শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে, যা একুশ শতকের জটিল সমস্যার সমাধানে অতীব জরুরি। একাধিক বিষয়কে একীভূত করে গবেষণা করার প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে, এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষার ওপর খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ৩০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ১৭ শতাংশ। সরকার টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষাকে মেইনস্ট্রিমে আনতে বদ্ধপরিকর।
প্রফেশনাল ১৩ ধরনের প্রতিষ্ঠানে (মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজ অ্যান্ড ইনস্টিটিউশন, হোমিওপ্যাথিক কলেজ, ইউনানি/আয়ুর্বেদিক, নার্সিং ইনস্টিটিউট, হেলথ টেকনোলজি, টেক্সটাইল টেকনোলজি, লেদার টেকনোলজি, ল’ অ্যান্ড আর্ট কলেজ, অ্যাগ্রিকালচার কলেজ, আর্মড ফোর্সেস অ্যান্ড আর্মি মেডিকেল কলেজ এবং লাইব্রেরি সায়েন্স) নারী শিক্ষার্থী ৫৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। এক লাখ ৭৮ হাজার ৯২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী এক লাখ এক হাজার ৮০২ জন।
স্বাধীনতার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে গেলেও শিক্ষার অগ্রগতিতে গত এক দশকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। সরকারি ভাষ্য নয় বরং বিশ্বব্যাংক, ইউনেস্কো, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামসহ আন্তর্জাতিক দাতা ও গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতিকে অন্যদের জন্য উদাহরণ অভিহিত করে বলছে, শিক্ষায় প্রতিটি পর্যায়ে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এক দশকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও টেকসই। শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে বাংলাদেশ ছুঁয়েছে নতুন মাইলফলক।
প্রথম বাঙালি হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে শিক্ষা অর্জনের জন্য এবং পরবর্তীতে শিক্ষকতার জন্য যাওয়া ব্যক্তি হলেন জগদীশ চন্দ্র বসু। ভগ্নিপতি আনন্দমোহন বসুর আনুকূল্যে জগদীশ চন্দ্র প্রকৃতিবিজ্ঞান সম্বন্ধে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন ৷ এখান থেকে ট্রাইপস পাশ করেন তিনি। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাঠ সম্পন্ন করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার প্রথম আঠারো মাসে জগদীশ যে সকল গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেছিলেন তা লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়৷ এই গবেষণা পত্রগুলোর সূত্র ধরেই লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৯৬ সালের মে মাসে তাকে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে৷ তার এই গবেষণা কর্মগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করেই ইংল্যান্ডের লিভারপুলে বক্তৃতা দেয়ার জন্য ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল৷ এই বক্তৃতার সাফল্যের পর তিনি বহু স্থান থেকে বক্তৃতার নিমন্ত্রণ পান৷ এর মধ্যে ছিল রয়েল ইনস্টিটিউশন, ফ্রান্স এবং জার্মানি৷
প্রতি বছর ১৩ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যান। অন্যান্য দেশে পড়তে যাওয়ার হিসাব যোগ করলে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে অসংখ্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ফুলব্রাইট স্কলারশিপ, যুক্তরাজ্য সরকারের শেভনিং স্কলারশিপ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশিপ, অস্ট্রেলিয়া সরকারের অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস এবং মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশীপের মতো শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশ থেকে হার্ভার্ড-অক্সফোর্ডের মতো জায়গায় পড়তে গিয়েছেন এবং পড়াশুনা শেষে সেখানে অধ্যাপনা করছেন এমন কয়েকজনের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত এখানে উল্লেখ করা হলো।
রওনক জাহান
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা প্রথম বাংলাদেশি নারী রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান। ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া রওনক জাহান ১৯৭০ সালে সেখান থেকে পিএইচডি করেন। এরপর সেখানে সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ও কেনেডি ইনস্টিটিউটে রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসাবে কাজ করেন। তিনি ১৯৯১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ছিলেন।
জামাল নজরুল ইসলাম
বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামের জন্ম ঝিনাইদহ জেলায় ১৯৩৯ সালে। ১৯৫৭ সালে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পড়তে যান। সেখান থেকেই স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএচডি ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। অতঃপর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি, ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, কিংস কলেজ লন্ডনের মতো জায়গায় গবেষক ও শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। জীবনের শেষদিকে দেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক হয়েছিলেন তিনি। ‘দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স’ তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ।
আলী রীয়াজ
বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি বিশ্লেষক আলী রীয়াজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় অনার্স এবং মাস্টার্স করেন। ১৯৯০ সালে তিনি ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারের ফেলোশিপ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডক্টরেট করতে যান। বর্তমানে তিনি ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
আজফার হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স এবং মাস্টার্স করার পর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পেয়ে ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজিতে মাস্টার্স করতে যান আজফার। মাস্টার্স শেষে সেখানে পিএচডিও করেন তিনি, অতঃপর একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পারেটিভ এথনিক স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। সুদীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে তিনি ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি, বওলিং গ্রীন স্টেট ইউনিভার্সিটি ও ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির মতো জায়গায় পড়িয়েছেন। বিদেশে গিয়ে দেশের কথা ভুলে যাননি তিনি, অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েও। বর্তমানে তিনি গ্লোবাল সেন্টার ফোর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।
আহমেদ শামীম
ভাষাবিদ আহমেদ শামীম মাস্টার্স এবং পিএচডি করেছেন ভাষাতত্ত্বে, সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক থেকে। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের অস্টিন ক্যাম্পাসে ডিপার্টমেন্ট অব এশিয়ান স্টাডিজে ইন্সট্রাকশন বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পড়াচ্ছেন। ‘বাংলা কথা’ এবং শব্দ হয় শব্দের ঘরে’ নামে তার বাংলা ভাষা নিয়ে দুটি বই রয়েছে।
অধ্যাপক ড. এম এম শহিদুল হাসান
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এম শহিদুল হাসান বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পড়াশুনা করা ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একজন উজ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স করার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্লার্কসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে পিএইচডি করেন। দীর্ঘদিন বুয়েটে শিক্ষকতার পর ২০১৬ সালে প্রফেসর হিসেবে অবসরে যান তিনি। তারপর থেকেই দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করে আসছেন তিনি।
বিরুপাক্ষ পাল
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করা বিরুপাক্ষ পাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্সচ এবং মাস্টার্স করেন। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি-সিডনি থেকে ফিন্যান্সে এমবিএ করার পর বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএচডি করেন। বর্তমানে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করছেন।
মুনজেরিন শহীদ
চট্টগ্রামের মেয়ে মুনজেরিন শহীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে গিয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্বে ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে পুরোনো ও বিখ্যাত যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করে ডাক পেয়েও যান তিনি। যুক্তরাজ্য সরকারের শেভনিং স্কলারশীপের আওতায় অ্যাপ্লায়েড লিঙ্গুয়েস্টিক অ্যান্ড সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ একুইজিশনে মাস্টার্স করেন তিনি। এখন কাজ করছেন রবি টেন মিনিট স্কুলে।
শাম্মী কুদ্দুস
হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে মাস্টার্স ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ করেছেন চট্টগ্রামের আরেক মেয়ে শাম্মী কুদ্দুস। বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশীপ সেন্টারের সহপ্রতিষ্ঠাতা এই নারী এখন কাজ করছেন গুগলের প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে। বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনি অন্যতম একটি স্থান দখল করে আছেন।
জাবির তিন শিক্ষার্থী
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের রুম্পা সরকার, মো. শরীফ হোসেন ও রেজাউল করিম রিপন নামে তিন শিক্ষার্থী। জাবিতে পড়াশোনার পাশাপাশি তারা তিনজনই গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা বিভিন্ন জার্নালে তাদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।
বর্তমান সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তনের মাধ্যমে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধনে সক্ষম হয়েছে। সব মহলের মতামত নিয়ে সমগ্র জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন, জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন করে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক মানসম্মত যুগোপযোগী শিক্ষা এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা, শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্যোগ, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, ভর্তি নীতিমালা বাস্তবায়ন, যথাসময়ে ক্লাস শুরু, নির্দিষ্ট দিনে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ, ৬০ দিনে ফল প্রকাশ, সৃজনশীল পদ্ধতি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, স্বচ্ছ গতিশীল শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আকৃষ্ট করে ঝরেপড়া বন্ধ করা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। স্কুল ও মাদ্রাসায় সব ধরনের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে যথাসময়ে বই পৌঁছে দিয়ে দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। এই অভূতপূর্ব সফলতা সমগ্র জাতির কাছে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্ব সমাজে পেয়েছে স্বীকৃতি ও মর্যাদা।
উচ্চশিক্ষা খাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রা মানবসম্পদের বিকাশ এবং শিক্ষা, উদ্ভাবন ও প্রতিভার সংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতিরই জ্বলন্ত প্রমাণ। প্রবেশাধিকার, মান এবং প্রাসঙ্গিকতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি জঙানভিত্তিক সমাজ গঠন এবং নিজেদেরকে একটি জ্ঞানকেন্দ্রে পরিণত করার দিকে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ সরকার উচ্চশিক্ষা খাতে যতো বেশি বিনিয়োগ করবে এই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং ব্যক্তিগত ক্ষমতায়ন ততো বেশি হবে। সামগ্রিক পদক্ষেপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়ার পথে এগিয়ে চলেছে এবং ভবিষ্যতে বৈশ্বিক পর্যায়ে জ্ঞানের প্রসার এবং সামাজিক অগ্রগতিতে অবদান রাখার সক্ষমতা অর্জন করে চলেছে।
Published in: News24bd